ছিয়ানব্বইয়ে আ.লীগ বিনা শর্তে ক্ষমা চেয়ে বলেছিল ‘আমরা ভালো হয়ে গেছি’: জামায়াত আমির
আওয়ামী লীগ তিন দফায় ক্ষমতায় এসে দেশে ছোপ ছোপ রক্ত আর কাড়ি কাড়ি লাশ উপহার দিয়েছে—এমন মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত যুব ম্যারাথন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার আগে আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে হাতজোড় করে বিনা শর্তে ক্ষমা চেয়েছিল। সে সময় তারা বলেছিল, অতীতে দলের ভুল ও জুলুমের জন্য তারা দুঃখিত এবং এবার ক্ষমতায় গেলে দেশের জন্য ভালো কিছু করবে। তখন তাদের হাতে তসবিহ ছিল, মাথায় ঘোমটা ছিল।
তিনি বলেন, জনগণ সহজ-সরলভাবে ভেবেছিল তাদের মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতায় বসেই তারা নিজেদের আসল রূপ প্রকাশ করে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে গিয়ে এক হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ঘোষণা দিয়েছিলেন, দলের একজন মানুষ মারা গেলে তার বিনিময়ে দশটি লাশ পড়বে। এই দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যের বাস্তব প্রতিফলন দেশজুড়ে দেখা গেছে।
জামায়াত আমির দাবি করেন, সে সময় খাল-বিল, নদী-নালা, জঙ্গল, হাট-মাঠ—সব জায়গায় মানুষের খণ্ডিত লাশ পাওয়া যেত।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশে একনায়কতন্ত্র কায়েম ছিল, যার পরিণতি মানুষ স্বচক্ষে দেখেছে। এরপরও আওয়ামী লীগ শিক্ষা নেয়নি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ ও ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় আসে। এই তিন দফা শাসনামলে দেশের এমন কোনো জনপদ নেই, যেখানে তাদের হাতে মানুষ নিহত হয়নি বা নারীদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়নি। একটি প্রতীকে ভোট দেওয়ার অপরাধে নোয়াখালীতে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনাও তুলে ধরেন তিনি।
একাত্তরের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, স্বাধীনতার সময় মানুষ বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী শাসকগোষ্ঠী সেই স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে রক্ষীবাহিনী গঠন করে ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়, লাশ দাফনের ব্যবস্থাও ছিল না। সোনার বাংলা গড়ার কথা বলে দেশকে শ্মশানে পরিণত করা হয়েছিল।
যুবকদের উদ্দেশে জামায়াত আমির বলেন, অতীতের ব্যর্থ রাজনীতিকে পায়ের নিচে ফেলে দিয়ে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে নতুন রাজনীতি গড়ে তুলতে হবে। যে রাজনীতি দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ ও মামলা বাণিজ্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর লক্ষ্য শুধু দলীয় বিজয় নয়, বরং ১৮ কোটি মানুষের বিজয়। এই বিজয়ের পথে যারা বাধা হয়ে দাঁড়াবে, যুবকরাই তাদের প্রতিহত করবে।
নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, তারা কোনো আনুকূল্য চান না, তবে কমিশন যেন শপথ অনুযায়ী সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন আয়োজন করে।

Please share your comment: