পরিবারতন্ত্র আর অনিয়মের বেড়াজালে ব্যাংক এশিয়া
চেয়ারম্যানের মা হচ্ছেন ২য় ভাইস-চেয়ারম্যান। আবার ইসি চেয়ারম্যান হচ্ছেন ভগ্নিপতি। এদিকে নতুন যিনি কনসালট্যান্ট নিয়োগ হচ্ছেন তিনি আবার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা এমডি’র আপন বড় ভাই। এরকম বিভিন্ন বিভাগ ও ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে বসে আছে একে অপরের আত্মীয় স্বজন। আর এভাবেই চলছে ব্যাংক এশিয়ার কার্যক্রম। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, গত মার্চ’ ২০২৫ –এর এজিএম হয় ব্যাংক এশিয়ার।
এরপরই কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ব্যাংকের ২য় ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় চেয়ারম্যান রোমো রউফ চৌধুরী’র মাকে। যদিও ১ম ভাইস-চেয়ারম্যান এর পদটি এখনও খালি রয়েছে। ১ম ভাইস-চেয়ারম্যানের পদ খালি রেখে ২য় ভাইস-চেয়াম্যানের নিয়োগের কোন নিয়ম নেই বলে ওই সূত্রটি জানিয়েছে।
এদিকে রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র পরিচালক বাকী খলিলি’কে চলতি দায়িত্বের সাথে নতুন করে অডিট কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। যদিও বাকী খলিলি’র চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারীতে। অন্য স্বতন্ত্র পরিচালকগন থাকা সত্ত্বেও একই ব্যক্তিকে দুই পদে পদায়ন করার এই অনিয়ম উঠে এসেছে অনুসন্ধানে।
অনুসন্ধানে আরো বেরিয়ে আসে, কারওয়ান বাজারে অবস্থিত ব্যাংক এশিয়া ভবনটির পাশে আরেকটি ভবন ভাড়া নেয়া হচ্ছে ’এশিয়া এন্টারপ্রাইজ’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে। এই এশিয়া এন্টারপ্রাইজের পরিচালক রুমী হোসেন একাধারে ব্যাংক এশিয়ার পরিচালক ও এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান। এই রুমী হোসেন আবার ব্যাংক এশিয়ার চেয়ারম্যান রোমো রউফ চৌধুরীর ভগ্নিপতি। ’কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ –এ এশিয়া এন্টারপ্রাইজের কাছ থেকে ওই ভবন ভাড়া নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, ’ইরা কম্পিউটারস’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানে ব্যাংক এশিয়ার বেশ কিছু শেয়ার ছিল। এই ’ইরা কম্পিউটারস’ এর মালিক আবার চেয়ারম্যানের আরেক ভগ্নিপতি নাফিজ খন্দকার। সম্প্রতি ব্যাংক এশিয়া কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ব্যাংকের শেয়ার টুকু ইরা কম্পিউটারস এর কাছে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেয়। অথচ নিয়মে আছে, ৩ টি পদ্ধতি অনুসরণ করে সর্বোচ্চ মূল্যে ব্যাংকের শেয়ার অন্যদের কাছে বিক্রি করতে হবে, যাতে ব্যাংক লাভবান হয়। এই বিষয়টি এন্টি-করাপশন ইস্যুতে ধরা পড়ার আশংকা থাকলেও ব্যাংক এশিয়া তার তোয়াক্কা করেনি।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক মানিলন্ডারিং জন্য ব্যাংক এশিয়াকে ৩০-৪০ লক্ষা টাকা জরিমানা করে। তবে চেয়ারম্যান নিজেই বোর্ড অফ ডিরেক্টরস এর অনুমতি না নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে এই জরিমানার টাকা পরিশোধ করায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে বোর্ড অফ ডিরেক্টরস এ মধ্যে।
সম্প্রতি আরেকটি অভিযোগ এসেছে যে, কিছুদিন আগে এক আমদানি কারকের কাছ থেকে ব্যাংক এশিয়া অনুমোদিত ফি -এর তুলনায় বেশি অর্থ কেটে রাখে। বিষয়টি ওই ভুক্তভোগী বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ করলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য লোক নিয়োগ করেছে, যাতে ভুক্তভোগী অতিরিক্ত কর্তনকৃত অর্থ ফেরৎ পায়।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ব্যাংক ট্রান্সফরমেশনের জন্য ব্যাংক এশিয়া কিছু সংখ্যক কনসালট্যান্ট নিয়োগ দিচ্ছে। এই কনসালট্যান্টদের মধ্যে একজন হচ্ছেন ব্যাংকের সদ্য সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর.কে হোসেন এর বড় ভাই সেলিম আর.কে হোসেন। যার বেতন ১০ লক্ষ টাকা ধরা হয়েছে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। এনিয়ে ব্যাংকের অভ্যন্তরে চলছে অসন্তোষ। খোঁজ নিয়ে জানা যায় বোর্ড কর্তৃক নিয়োগকৃত ওই কনসালটেশন কোম্পানীর নাম হচ্ছে ’আরএসএ অ্যাডভাইজরি’। এই নিয়োগ ইস্যু নিয়ে একাধিক ‘অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক’দের মধ্যেও অসন্তোষ রয়েছে বলে সূত্রটি জানায়।

Please share your comment: