আমরা ঋণের ফাঁদে পড়ে গেছি: এনবিআর চেয়ারম্যান
দেশের ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নীতিনির্ধারক ও অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা। তাদের আশঙ্কা—প্রয়োজনীয় সংস্কার ও রাজস্ব আদায় না বাড়াতে পারলে বাংলাদেশ গভীর ঋণঝুঁকিতে পড়তে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে ঋণের ফাঁদে পড়ে গেছি। এই বাস্তবতা স্বীকার না করলে সামনে এগোনো সম্ভব নয়।’
সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) আয়োজিত ওই সেমিনারে ‘বাংলাদেশ স্টেট অব দ্য ইকোনমি ২০২৫’ এবং ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অগ্রগতি প্রতিবেদন ২০২৫’ প্রকাশ ও উপস্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার ও আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করে রাজস্ব আদায় বাড়ানো না গেলে বাংলাদেশ গুরুতর ঋণের ফাঁদে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
তিনি বলেন, একসময় বাজেট ব্যয়ের বড় খাত ছিল সরকারি কর্মচারীদের বেতন-পেনশন ও কৃষি-শিক্ষা। কিন্তু এখন এসব খাতকে পেছনে ফেলে ঋণের সুদ পরিশোধ ব্যয়ের বড় জায়গা দখল করেছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও আমাদের কর-জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের বেশি ছিল। এখন তা ৭ শতাংশের আশপাশে। এর মূল কারণ—জিডিপির সব খাত থেকে কার্যকরভাবে রাজস্ব আদায় সম্ভব হচ্ছে না।’
তিনি আরও জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই এনবিআর দুই ভাগ হয়ে দুজন সচিবের নেতৃত্বে কার্যক্রম শুরু করবে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানান, সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া দ্রুত এগোচ্ছে। আমানত বিমা বা ডিপোজিট গ্যারান্টি এক লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই লাখ টাকা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে আমানতকারীদের অর্থ ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। এর ফলে পাঁচ ব্যাংকের প্রায় ৭৬ লাখ পরিবার উপকৃত হবে। নতুন গঠিত ব্যাংকটি প্রথম অথবা দ্বিতীয় বছরেই মুনাফায় যেতে পারে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার অর্থবিষয়ক বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, অর্থ বিভাগের সচিব মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার, পরিকল্পনা বিভাগের সচিব এস এম শাকিল আখতারসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

Please share your comment: